নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ:
আপনি যখন নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করবেন প্রথমেই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ প্রয়োজন পড়বে, এরপর পর্যায়ক্রমে জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা মাতার এনআইডি এবং আপনি যে দেশের নাগরিক সে নাগরিকত্বের সনদের প্রয়োজন পড়বে।
নতুন ভোটার হতে যা যা প্রয়োজন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
জাতীয় পরিচয় পত্র একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের জন্য খুবই গুরু্বপুর্ণ একটি আইডি কার্ড।তাই আপনাকে আগে শিওর হতে হবে আপনি কি আসলেই বাংলাদেশী নাগরিক কিনা। এবং আপনার সকল প্রকার তথ্য সঠিক আছে কিনা । আপনি নতুন ভোটার হয়ে থাকলে অবশ্যই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে পূর্বে আপনি কোথাও ভোটার হয়েছিলেন কিনা।
জাতীয় পরিচয় পত্র/national I’d card(NID) করার জন্য আপনার সত্যতা যাচাই এর জন্য অনেক রকম এর কাগজপত্র এর দরকার পড়ে । এছাড়া আমাদের দেশের নাগরিক ব্যতীত অন্য দেশের নাগরিকরাও এখন আমাদের দেশের নাগরিকদের মতো সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে যেমন রোহিঙ্গা এরা অন্য দেশের নাগরিক হওয়া শর্ত বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতো তারাও সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তাদেরও জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করার সময় আমাদের যেই কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন হয় তার থেকেও অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। তাই আপনি যদি রোহিঙ্গা হয়ে থাকেন আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে উপজেলার নির্বাচন অফিস থেকে জেনে নিতে হবে অতিরিক্ত কি কি কাগজ প্রয়োজন পড়বে।
আসল জানা যাক আপনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে মূলত কি কি তথ্যের প্রয়োজন পড়বে….
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ,
- জন্ম সনদ,
- পিতা মাতার এনআইডি কার্ড এর কপি,
- বাবা ব্যতীত যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্যে তিন জনের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি,
- জমির খাজনা রশিদ,
- হোল্ডিং ট্যাক্স,
- ইউটিলিটি বিল এর কপি,
- চেয়ারম্যান অথবা কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র।
জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করতে যেসব কাগজপত্রের এবং তথ্যের প্রয়োজন হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক
১. জন্ম নিবন্ধন সনদ :
জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির আবেদনের জন্য সর্বপ্রথম দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়বে। তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন টি যদি এনালগ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বলতে বোঝানো হয়েছে আপনার জন্ম নিবন্ধনে আপনার সকল তথ্য বাংলায় থাকার পাশাপাশি ইংরেজিতে থাকতে হবে।
২. শিক্ষা সনদ :
নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরীর আবেদন করার জন্য জন্ম নিবন্ধনের পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে আপনার শিক্ষা সনদ। গুলো আপনি শিক্ষা বোর্ড থেকে অর্জন
করে থাকবেন। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত এ একাডেমী সার্টিফিকেট গুলো যেমন এসএসসি অথবা এইচএসসি এর সার্টিফিকেট। আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেটে আপনার নিজের নাম, আপনার পিতা-মাতার সঠিক নাম, এবং জন্ম তারিখ এর জন্ম সনদের সাথে মিল থাকতে হবে। আপনার এই সকল তথ্যে যদি কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকে বা পূর্ব থেকেই ভুল থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি এনআইডি কার্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হবেন। তাই অবশ্যই আপনার এ সকল তথ্য আগে থেকেই লক্ষ্য করে নিতে হবে।
তবে দেশের প্রতিটা নাগরিক যে শিক্ষিত তা নয় তবে শিক্ষিত না হওয়া সত্ত্বেও সে ভোটার অধিকার গ্রহণ করতে পারবে। তবে তাদের ক্ষেত্রে নতুন ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদন করার জন্য প্রয়োজন পড়বে পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের। তবে দেশের সকল অশিক্ষিত মানুষেরই যে পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং ইভিং লাইসেন্স আছে এমনটি নয়। সে ক্ষেত্রে কি সে দেশের ভোটার অধিকার গ্রহণ করতে পারবে না ? অবশ্যই পারবে সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন এর উপর ভিত্তি করে সে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে।
৩. পিতা মাতার এনআইডি কার্ড :
নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম সংযুক্ত হওয়ার কারণে এখন আপনার নতুন ভোটার আইডি তৈরি করতে আপনার পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের নাম্বার সংযুক্ত করতে হয়। তাই এখন আপনি যদি চান নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজন পড়বে। আবার আপনার পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম আপনার পূর্বের সকল সনদ যেমন জন্ম সনদ শিক্ষা সনদের সাথে মিল থাকতে হবে।
এছাড়াও আপনার পিতা মাতার মধ্যে যদি কেউ মৃত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তার মৃত্যু সনদ ও সংযুক্ত করতে হবে।
৪. ব্লাড গ্রুপ :
বর্তমানে আপনি যদি নতুন এনআইডি কার্ড তৈরি করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার রক্তের গ্রুপটি সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আপনার নিকটস্থ কোন প্যাথলজি থেকে আপনার রক্তের গ্রুপটি সঠিকভাবে পরীক্ষা করে রিপোর্টের কপিটি নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদনের কাগজের সাথে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। তবে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার রক্তের গ্রুপের রিপোর্টটির ছবি অথবা স্ক্যান করে আপলোড দিতে হবে। এরপর আপনার যাবতীয় কাগজ জমা দেওয়ার সময় রক্তের গ্রুপের রিপোর্টটির কপি ও জমা দিতে হবে।
৫. নাগরিক সনদ :
এ নাগরিক সনদকে আবার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট প্রত্যয়ন পত্র বলা হয়ে থাকে।
আপনি যদি কোন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সেই দেশের জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি যে দেশের একজন নাগরিক সেটি প্রমাণ সহকারে আপনার নাগরিকত্বের সনদ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। এই নাগরিকত্বের সমাপ্তি আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনারের কাছে থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
৬. স্বামী স্ত্রীর এনআইডি কার্ড :
আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড করার আগেই বিবাহিত হয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আপনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনি যে বিবাহিত এর প্রমাণ স্বার্থে আপনার নিকানামা অথবা কাবিননামা অথবা ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর কপি জমা দিতে হবে।
৭. অঙ্গীকারনামা :
একজন ব্যক্তি জীবনে একবার ঐ দেশের জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করতে পারে। তাই সে পূর্বে কোন এলাকা থেকে ভোটার বন্ধন করেছেন কিনা তার সত্যতা যা চায়ের জন্য একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা নেয়া হয়। কোন ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার ভোটা নিবন্ধন করে থাকে এবং সেটি যথাযথ প্রমাণ যুক্ত হলে সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এজন্য দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই আমাদের উচিত আমরা যেন আমাদের সুযোগের অপব্যবহার না করি। এবং অপরকেও যদি করে থাকে তাকে বাধা প্রদান করতে হবে। অঙ্গীকারনামাল লেখার একটি নিয়ম রয়েছে চলুন দেখা যাক এই নিয়মগুলো……
**অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম :
- নতুন ভোটারদের জন্য অঙ্গীকারনামার প্রয়োজন পড়ে না। যদি আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন ভোটার হওয়ার সুযোগও পেয়ে থাকেন এরপরও আপনি যদি জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন না করে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি যদি জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে যান আপনার একটি অঙ্গীকার নামার প্রয়োজন পড়বে। এর মূল কারণ হচ্ছে আপনি কি এর আগে অন্য কোন এলাকা থেকে ভোটার নিবন্ধন করেছেন কিনা তা সত্যতা যাচাই।
- একটি স্বাধীন দেশের একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্র করার সুযোগ রয়েছে। একজন ব্যক্তি দ্বিতীয় বার ভোটারের জন্য আবেদন করতে পারবেনা এবং এটি আইনত অপরাধ। আর আপনি যদি এই কাজটি করে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার বিপক্ষে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- যাদের বয়স বেশি হয়ে গেছে ভোটার হওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তারা আবেদন করেনি শুধুমাত্র তাদের আবেদনের ক্ষেত্রেই এই অঙ্গীকারন আমার প্রয়োজন পড়বে। তাই নতুন ভোটারদের এই অঙ্গীকারনামার ঝামেলা নেই।
- একটি অঙ্গীকারনামা তৈরি করার জন্য প্রথমেই আপনার a4 সাইজের পেজের প্রয়োজন পড়বে। আপনার নিকটস্থ কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে অঙ্গীকারনামার কথা বললে তারা আপনাকে একটি নমুনা দেখিয়ে দেবে। অথবা নিচে আপনার স্বাক্ষর করে কম্পিউটার কম্পোজ করে নিলেই হবে।
৮. হোল্ডিং ট্যাক্স :
আপনি যখন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে যাবেন সেক্ষেত্রে আপনার আরো একটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে আপনার বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ। বাসা বাড়ির এই হোল্ডিং ট্যাগ ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন দ্বারা পরিশোধিত হয়ে থাকে। এই হোল্ডিং ট্যাক্সে আবেদনকারীর নাম না থাকলেও চলবে তবে অবশ্যই তার পিতা-মাতা অথবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নাম থাকতে হবে।
১০. ইউটিলিটি বিল এর কপি :
ইউটিলিটি বিলের মধ্যে পরে আপনার বাসার বিদ্যুৎ বিল পানির বিল এবং গ্যাসের বিল। আপনি যখন নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে যাবেন তখন আপনার বাসার বিদ্যুৎ বিল পানির বিল অথবা গ্যাসের বিল পরিশোধের যে রশিদ তার কপি জমা দিতে হবে। বিলের এই ওষুধগুলোতে আবেদনকারীর নাম না থাকলেও তার পিতা-মাতা অথবা তার পরিবারের সদস্যের নাম থাকতে হবে এবং তা প্রমাণসহ জমা দিতে হবে। আপনার যদি বিলের কপি না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি বাসার হোল্ডিং ট্যাক্সের কপি জমা দিলেও চলবে।
১০. পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি :
নতুন ভোটার হিসাবে আপনি যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করবেন সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি আপনার জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট নয়। তবে কোন দেশের সকল নাগরিকত্ব শিক্ষিত নয় সেক্ষেত্রে যদি দেশের কোন নাগরিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে সেক্ষেত্রে তার শিক্ষা সনদের পরিবর্তে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দেওয়া যাবে।
আবার কোন ব্যক্তির যদি এসব সনদের কোন একটিও না থাকে সেক্ষেত্রেও সে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে শুধুমাত্র জন্ম সনদের কপি জমা দিয়ে।
সর্বশেষে আমাদের দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলেরই মনে রাখতে হবে আমরা যেন কোন প্রকার দুর্নীতির সাথে সংযুক্ত না হয়। অতিরিক্ত ভোগের আশায় আমরা যেন দ্বিতীয়বার জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন না করি। এবং আমাদের আশেপাশে যে সকল মানুষ রয়েছে তাদের কেউ এ বিষয়ে সচেতন করি।