আপনার যদি শরীরে ক্যান্সার ধরা দেয় বা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি কম হয় তাহলে আপনার জন্য করোসল পাতার উপকারিতা – করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়? এই বিষয়গুলো জানা অপরিহার্য। করোসল পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান আপনার ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করবে এবং আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
করোসল পাতার উপকারী গুনাগুনের কারণে অনেকেই করোসল পাতার উপকারিতা – করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়? জানতে আগ্রহী হন। আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্যই যারা করোসল পাতার উপকারিতা – করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়? এসব জানতে আগ্রহী। চলুন কথা না বাড়িয়ে আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
পেজ সূচিপত্র
করোসল পাতা এবং করোসল ফল কি
করোসল পাতা এবং করোসল ফল কি? এই জিনিসের কাজই বা কি? সকল প্রশ্নের উত্তর আজ আপনি এই আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন। করোসল গাছের পাতা ও ফল হচ্ছে করোসল পাতা এবং করোসল ফল। করোসল গাছ অনেক উপকারী এবং ওষুধি গুণাগুণে ভরপুর একটি গাছ।
করোসল ফল এবং পাতা অ্যানোনা মিউরিকাটা গোত্রের। করোসল পাতা এবং করোসল ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। করোসল পাতা এবং করোসল ফল কেমোথেরাপির কাজ করে থাকে। করোসল ফল কাটা বিশিষ্ট একটি ফল যা তীব্র গন্ধ যুক্ত।
করোসল ফল বাহিরে থেকে কাঁঠালের মত দেখতে এবং ভিতরে তরমুজের মত দেখতে তবে সাদা রঙের। করোসল পাতা সবুজ রঙের। করোসল পাতা অনেক উপকারি। অর্থাৎ, করোসল পাতা এবং করোসল ফল অনেক উপকারি এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী।
করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান
করোসল ফল তীব্র গন্ধ যুক্ত একটি ওষুধি ফল। যা বিভিন্ন পুষ্টি গুনে ভরপুর। করোসল ফল খেলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। করোসল ফল কাটা বিশিষ্ট । করোসল ফল বাহিরে থেকে কাঁঠালের মত দেখতে এবং ভিতরে তরমুজের মত দেখতে তবে সাদা রঙের।
করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী। আপনি যদি করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আর্টিকেল টি পড়তে থাকুন। করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে ভিটামিন সি , ভিটামিন বি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। প্রতি ১০০ গ্রামে থাকা করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান নিচে তুলে ধরা হলো:
- চর্বি – ০.২ গ্রাম
- প্রোটিন – ০.৮ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ২৩৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – ১৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – ২৫০ মিলিগ্রাম
- ফলিক এসিড – ১৪ এমসিজি
- ভিটামিন সি – ১৯ মিলিগ্রাম
- এনার্জি – ৬৪ ক্যালোরি
- ফাইবার – ১.৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট – ১৫.৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৪০ মিলিগ্রাম; ইত্যাদী।
করোসল পাতার উপকারিতা
করোসল পাতার উপকারিতা অনেক, যা গুনে শেষ করা যাবে না। করোসল পাতা সবুজ রঙের, যা করোসল গাছে পাওয়া যায়। করোসল পাতা অনেক ওষুধি গুনাগুন সম্পন্ন। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
করোসল পাতার উপকারিতা সম্পর্ক জানতে পড়তে থাকুন। করোসল ক্যান্সার রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কারণ করোসল পাতায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান কেমোথেরাপির চাইতে দশ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। করোসল পাতার উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:
- ১) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: করোসল পাতা শরীরের কোষ কে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। কারণ কৌশল পাতায় রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষকে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- ২) অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরী: করোসল পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরী। যা দেহের আর্থ্রাইটিস ও প্রদাহ জনিত রোগের জন্য উপকারী।
- ৩) রোগ প্রতিরোধকারী: করোসল পাতা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ৪) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: করোসল পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমাদের দেহের জন্য যা অনেক উপকারি।
- ৫) ক্যান্সার প্রতিরোধ: করোসল পাতায় রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্ট্রোজেনিন। যা শরীরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পেতে দেয় না। করোসল পাতার পুষ্টি উপাদান কেমোথেরাপির চাইতে দশ হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় করোসল পাতা খাওয়া ।
- ৬) হজমে সহায়ক: পরশের পাতায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
- ৭) মানসিক চাপ কমায়: করোসল পাতা আমাদের স্নায়ু শিথিল করে । যার ফলে আমাদের বুক ধরফর করা, উদ্বেগ, অস্থিরতা, মানসিক চাপ কমে যায়। উপরোক্ত আলোচনা করোসল পাতার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম
যে কোন জিনিস সঠিক নিয়মে খেলে তার উপকারিতা ভালোভাবে পাওয়া যায়। পৃথিবীর যে কোন জিনিস সঠিক নিয়মে না খেলে ভালোর পরিবর্তে মন্দ হতে পারে। করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম আছে। আপনি যদি করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে করোসল পাতা খান তাহলে আপনি করোসল পাতার সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পাবেন।
চলুন করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক। করোসল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে: প্রথমে বেশ কিছু যেমন ১০-১৫ টি করোসল পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর পাতাগুলোকে সুন্দরভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার পাতা পরিষ্কার পানিতে দিয়ে চুলোয় গরম করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট করোসল পাতা বিশিষ্ট পানি গরম করার পর ছেড়ে চুলে থেকে নামিয়ে নিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিতে হবে। তাহলে তৈরি হয়ে যাবে করোসল পাতার চা। আপনি চাইলে পানীয়টি গরম খেতে পারেন অথবা ঠান্ডা করে খেতে পারেন। প্রতিদিন তিন মেলা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর এভাবে করোসল পাতার চা খেতে হবে। এটিই করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম।
করোসল যেভাবে কাজ করে
করোসল সম্পর্কে এত কিছু জানার পর আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে করোসল কিভাবে কাজ করে? করোসল কাজ করে প্রকৃতিগত ভাবে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে। অনেকে করসল পাতা কুচি কুচি করে চা বানিয়ে খান। আবার অনেকে করোসল ফল সেটি পাকা বা কাঁচা হতে পারে দিয়ে শরবত তৈরি করে খান। আবার অনেকে শুধু পাতা বা ফল খেয়ে থাকেন। চলুন করোসল যেভাবে কাজ করে জেনে নেওয়া যাক।
করোসল গাছে রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্ট্রোজেনিন। যা শরীরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পেতে দেয় না। করোসল পাতার পুষ্টি উপাদান কেমোথেরাপির চাইতে দশ হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। আবার করোসলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। করোসল আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। করোসলের ঔষধি গুনাগুন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
করোসল ফলের অপকারিতা
আমাদের শরীরের জন্য যতটুকু প্রয়োজন আমাদের ঠিক ততটুকুই গ্রহণ করা উচিত। যেকোনো উপকারী জিনিসও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনি করোসল ফল আমাদের অনেক উপকারিতা প্রদান করলেও করোসল ফলের অপকারিতা রয়েছে। অতিমাত্রায় করোসল ফল খেলে এটি আমাদের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চলুন করোসল ফলের অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক। নিচে করোসল ফলের অপকারিতা তুলে ধরা হলো:
- ১) কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে: প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ করোসল ফল খেলে এটি আমাদের কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে।
- ২) লো প্রেসার রোগীদের জন্য ক্ষতিকর: করোসল ফলে থাকা বিভিন্ন উপাদান আমাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে যাদের আগে থেকেই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের করোসল ফল এড়ানো উচিত।
- ৩) নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ সেবন: যারা নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ সেবন করেন তারা যদি করোসল ফল খান তাহলে এটি ওষুধের উপাদানের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে দেহে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কে সৃষ্টি করতে পারে।
- ৪) গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি: বেশি মাত্রায় করোসল ফল খেলে দেহে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি।
- ৫) নিউরোলজিক্যাল সমস্যা সৃষ্টি: গবেষণালব্ধ প্রমাণ হতে দেখা যায় করোসল ফলে থাকা কিছু উপাদান আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। তাই অতিমাত্রায় করোসল ফল খেলে নিউরোলজিক্যাল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- ৬) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অপকারী: করোসল ফলে কিছু টক্সিক উপাদান থাকে। যা দেহে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য করোসল ফল খাওয়া অপকারী।
- ৭) এলার্জির সমস্যা হতে পারে: যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের অনেক কিছু খাওয়া বারণ থাকে। করোসল ফল থাকা কিছুই উপাদান এলার্জি বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। আশা করি আপনি করোসল ফলের অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়
করোসল পাতার উপকারিতা জানার পর আপনারা অবশ্যই এখন ভাববেন যে করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়? চিন্তা নেই এই প্রশ্নের উত্তর আমি আপনাকে দেবো। করোসল পাতা ক্যান্সার প্রতিনিধি হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়? এই সন্ধানে নেমে পড়েছেন।
করোসল গাছ আমাদের দেশীয় গাছ নয়। পূর্বে এটি আমাদের দেশে চাষ হতো না। এখন সুখবর যে বর্তমানে করোসল গাছের চাষের হার আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশে ভারত থেকে করোসল গাছ আমদানি করা হয়। কারণ ভারতে প্রচুর পরিমাণে করোসল গাছ চাষ হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলায় করোসল গাছ চাষ হচ্ছে। যেমন: রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল ইত্যাদি। আর করোসল গাছ যেখানে থাকবে করোসল পাতা সেখানে থাকবেই।
আবার অনেক সময় আমাদের বাড়ির চারপাশে করোসল গাছ জন্ম নেয়। অর্থাৎ করোসল পাতা ভারত, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন:রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল; আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা ইত্যাদি জায়গায় পাওয়া যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলে করোসল ফলের দাম কত -করোসল পাতার উপকারিতা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। করোসল পাতার উপকারিতা করোসল – পাতা কোথায় পাওয়া যায়? এই সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি আজকের আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনি করোসল পাতার উপকারিতা – করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় এসব জানতে সক্ষম হয়েছেন। আপনার যদি করোসল পাতার উপকারিতা – করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় বিষয়ক আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদের জানার ব্যবস্থা করে দিন। ধন্যবাদ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য।